জলাতঙ্ক কি ও তার প্রতিরোধের উপায়
জলাতঙ্ক কি ও তার প্রতিরোধের উপায়।
জলাতঙ্ক কে হাইড্রোফোবিয়া নামেও ডাকা হয়। র্যাবিস ভাইরাস ঘটিত একটি মারাত্মক রোগ হলো জলাতঙ্ক। জলাতঙ্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবো।
প্রথমত
কুকুরের আঁচড় বা কামড়ের পর দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জলাতঙ্ক ও ধনুষ্টংকারের টিকা গ্রহণ করা উচিত।
যেকোনো সময় পাগলা কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে পারে যে কেউ। এ ছাড়া সাধারণ কুকুরকে বিরক্ত করলেও কামড় দিতে পারে। বছরের নির্দিষ্ট সময় কুকুরের আক্রমন বেড়ে যায় তাই কুকুরকে উত্ত্যক্ত না করে সতর্কভাবে চলাফেরা করা উচিত।
জলাতঙ্ক যেভাবে ছড়ায়:
১. কুকুর, শিয়াল,বানর, বেঁজি, বাদুড় ইত্যাদি র্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে।
২.আক্রান্ত প্রাণি মানুষকে কামড়ালে।
৩.আক্রান্ত প্রাণির মুখের লালা পুরোনো ক্ষতে বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়।
জলাতঙ্কের লক্ষণ:
১.সন্দেহজনক প্রাণি কামড়ানোর ৯ থেকে ৯০ দিনের মাঝে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেয়।
২. কারো শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে উন্মত্ত বা পাগলামো আচরণ এবং মৌন আচরণ—এ দুই ধরনের আচরণ দেখা দিতে পারে।
৩. আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি হবে অস্বাভাবিক।
৪. সে উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়াবে।
৫.ক্ষুধামন্দা হবে।
৬. বিকৃত আওয়াজ করবে।
৭.বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে আসবে।
৮. পানির পিপাসা খুব বেড়ে যাবে।
৯.পানি পান করতে পারবে না।
১০.পানি দেখলে আতঙ্কিত হবে।
১১.আলোর সংস্পর্শে আসলে আতঙ্ক বেড়ে যাবে।
১২.খাবার খেতে কষ্ট হবে।
১৩. শরীরে কাঁপুনিআসতে পারে।
মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হবে। ১৪.কণ্ঠস্বর কর্কশ হতে পারে,ইত্যাদি।
প্রতিরোধ
সন্দেহভাজন প্রাণি কামড়ানো বা আঁচড়ানোর সাথে সাথে ক্ষতস্থানটি ১০-২০ মিনিট ধরে সাবান ও প্রবহমান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার পর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। সম্ভব হলে কোনো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে পারেন ক্ষতটি ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য। অথবা ক্লোরহেক্সিডিন বা পোভিডোন আয়োডিন দিয়ে ক্ষতস্থানটিকে ভালো করে ওয়াশ করতে হবে। এতে ৭০-৮০% জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়।
এরপর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো র্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। সাধারণত প্রথম দিন দেওয়ার পর ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে মোট ৫টি ডোজে ভ্যাকসিন দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে হিউম্যান র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিনও দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
ক্ষতস্থানে যা করা যাবে না:
ক্ষতস্থানে কোনো স্যালাইন, বরফ, চিনি, লবণ ইত্যাদি ক্ষারক পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না। বাটিপড়া, পানপড়া, চিনিপড়া, মিছরিপড়া, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি জলাতঙ্কের হাত থেকে কাউকে বাঁচাতে পারে না।
ক্ষতস্থান কখনোই অন্য কিছু দিয়ে কাটা, চোষণ করা বা ব্যান্ডেজ করা যাবে না। এতে বরং ইনফেকশন হতে পারে। ক্ষতস্থানে বরফ, ইলেকট্রিক শক দেওয়া যাবে না কিংবা হাত-পা বাঁধাও যাবে না।
কোনো কবিরাজ বা ওঝার শরণাপন্ন হয়ে কোনো অবৈজ্ঞানিক কিংবা অপচিকিৎসা গ্রহণ করে সময় ক্ষেপণ করবেন না।
যেসব প্রাণির কামড়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন নেই
ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ ইত্যাদি কামড় দিলে র্যাবিস ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে টিটেনাস ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন